শুক্রবার, ১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

২৪ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৩৫ অপরাহ্ণ

উপাচার্যের সিংহাসন বেশী দামী না সাতাশ শিক্ষার্থীর তাজা প্রাণ

আপডেট টাইম : জানুয়ারি ২৪, ২০২২ ১০:৩৫ অপরাহ্ণ



শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকারের উচ্চমহলের সঙ্গে আলোচনার অপেক্ষায় আছেন, তবে তারা ভাঙবেন না অনশন। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর ১টায় প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের এমনটাই জানালেন আন্দোলনকারীরা।

এসময় তারা বলেন, আমরা শিক্ষামন্ত্রী বা তাঁর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। আমাদের বলা হয়েছিলো অনশন ভেঙে আলোচনায় বসতে, কিন্তু আমরা অনশন ভাঙবো না। এই অবস্থায় আলোচনা করতে চাই।

প্রেস ব্রিফিংকালে আন্দোলনকারীরা আরও জানান, অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা সময় সময় খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে। হাসপাতালে মোট ১৯ জন ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ৪ জনের শারীরিক অবস্থা একটু ভালো হয়ে যাওয়ায় হাসপাতাল থেকে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আনশনে যোগ দিয়েছেন। হাসপাতালে যারা আছেন তারাও কিন্তু অনশন পালন করছেন। এখন অনশনে আছেন মোট ২৩ জন আর এই মুহুর্তে (সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত) ক্যাম্পাসে অনশন করছেন ১৩ জন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, অনেক পত্রিকায় লেখা হচ্ছে- আমরা ভিসি’ বাসভবনের পানি, গ্যাস ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। আসলে তথ্যটি ঠিক নয়, আমরা শুধু বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি।

শাবিপ্রবি’র উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত বুধবার থেকে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে ২৪ জন শিক্ষার্থী অনশনে বসলেও একজনের বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি বাড়ি চলে যান। পরে শনিবার ও রবিবার আগের ২৩ জনের সঙ্গে আরও ৫ শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন।

শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু হয় ১৩ জানুয়ারি দিনগত মধ্যরাতে। ওই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।

১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন নামেন।

বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শনিবার দুপুরে কাফন পরে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় দেন গণ-অনশনের ঘোষণা।

এদিকে, শাবি শিক্ষার্থীদের কাছে বার বার আওয়ামী লীগে শীর্ষ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা নিয়ে বার বার গেলেও তারা ভাঙ্গেননি অনশন। গতকাল রোববার শাবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিং করে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির উদ্দেশে বলেন, তাদের মূল দাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না। তবে শিক্ষামন্ত্রীর ভার্চুয়ালি আলোচনা করতে আগ্রহী তার।

উপাচার্য ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শনিবার গভীর রাতে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। দীপু মনি আশ্বস্ত করেন, লিখিত দাবি পেলে সেগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেবে সরকার।

এর আগে শনিবার রাতে ঢাকায় নিজ বাসভবনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী। এসময় তিনি জানান, প্রয়োজনে তার প্রতিনিধিদল শাবিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। শিক্ষার্থীরা যখন কথা বলতে রাজি হবে, তখনই প্রতিনিধি যেতে পারবে। পারিবারিক কারণে এখন তিনি সিলেটে যেতে পারছেন না।

এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মন্ত্রীর পক্ষে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ কয়েকজন নেতা। এতে দীপু মনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার অনুরোধ করলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে।

এদিকে, আন্দোলনের একপর্যায়ে গতকাল (রবিবার) সন্ধ্যায় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও তাঁর পরিবার বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থায় রাত পার করেছেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন,আপনারা যখন প্রশ্ন করেন আর কি কর্মসুচি,আমরা তখন বেদনায় মরে যাই।আমরা তো এখানে মরেই যাচ্ছি।অহিংস আন্দোলনের শেষ পরিণতি মৃত্যু।আমরণ অনশন করে আমরার মরার উপক্রম।শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন রেখে বলেন,একজন গুলিবাজ বোমাবাজ উপাচার্যের সিংহাসন বেশী দামী না সাতাশ জন শিক্ষার্থীর তাজা প্রাণ?

শেয়ার করুন